ইন্টারনেটের গতি ও মূল্য সুলভ না হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ সফল হবে না: মোস্তাফা জব্বার
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
সরকার যতো উদ্যোগ নিক না কেন বলে মন্তব্য করেছেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। গতকাল বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব বলে তিনি। তিনি বলেন, ইন্টারনেট মানুষের মৌলিক অধিকার। ৭৮ হাজার টাকার ব্যান্ডউইথ সরকার ৬০০ টাকায় নিয়ে এসেছে। অথচ গ্রাহক সেই সুবিধা পায়নি। আমি চাই গ্রাহক ব্যান্ডউইথ প্যাকেজ পাক। কারণ অপারেটররা ব্যান্ডউইথ কেনে, ডাটা নয়। আইসিটি মন্ত্রী আরও বলেন, পুশ এসএমএস বন্ধ ও গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করার দায় রাষ্ট্রের।
এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসময় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও সচিব সুবির কিশোর চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে নিয়ন্ত্রণের চিন্তা না করে এর সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনে সহায়তার মানসিকতা নিয়ে এগোতে চান নতুন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
টেলিযোগাযাগ বিভাগ ও বিটিআরসির মধ্যে টানাপড়েনের বিষয়ে উদ্যোগের কথা জানতে চাইলে মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিটিআরসি সুনিদির্ষ্ট দায়িত্ব পালন করলেও এককভাবে সমস্ত কার্যক্রম চালাতে পারে তা।তবে সেখানে নিয়ন্ত্রণের কোনো বিষয় না। বিষয়টি হচ্ছে, জনগণের পক্ষে কাজ করছে কি না ওই জায়গাটা নিশ্চিত করা। আমি মনে করি না, বিটিআরসির হাত-পা বেঁধে তারপর মন্ত্রণালয় থেকে বলতে হবে, তুমি কাজ করো। (বরং) আমি বিশ্বাস করি, কোন জায়গায় তাকে ফ্যাসিলিটেটেড করা দরকার তা করা হবে।… নিয়ন্ত্রণ নয়, বড় বিষয় হচ্ছে সহায়তা করা।
২০১০ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধনের পর টেলিযোগাযোগ সম্পর্কিত ক্ষমতা বিটিআরসি থেকে মন্ত্রণালয়ের কাছে চলে যায়। এরপর থেকে বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স ইস্যুসহ অন্যান্য বিষয়ে বিটিআরসি ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। তারানা হালিম এই বিভাগের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন অবস্থায় সংস্থার কাজে স্থবিরতার জন্য মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে বিটিআরসিকে স্বাধীন কমিশনে রূপান্তরের পক্ষে চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বক্তব্য দিয়েছিলেন।
বিটিআরসির স্থবিরতার জন্য বিভিন্ন কাজে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অনুমোদন পেতে বিলম্ব হওয়াকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছিলেন। নতুন মন্ত্রী বলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মধ্যে কোনো বিরোধ থাকার কারণ নেই।‘দুটি বিভাগ দুটি চোখ বা হাতের মতো’ একসাথে কাজ সমন্বিতভাবে করবে। ইন্টোনেটের গতি ও সাশ্রয়ীমূল্যে নিশ্চিত করতে না পারলে বাংলাদেশে ‘ডিজিটালাইজড’ হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, জনগণের অধিকার আছে তার উপযুক্ত সেবা যাতে তারা পায়। জনগণ যেন অভিযোগ করার সুযোগ পায় এবং সেবিষয়ে পুরোপুরি ব্যবস্থা যাতে নেওয়া যায় এবং যদি দুর্বলতা থাকে তাহলে তা কাটিয়ে উঠা হবে।
৭৮ হাজার টাকার ব্যান্ডউইডথ যদি ৬০০ টাকায় নিয়ে আসতে পারি তাহলে সে সুযোগ কেন সাধারণ গ্রাহকরা পাবে না। না পাওয়ার অন্তরায় হচ্ছে- মোবাইলের জন্য কলরেট নির্ধারণ করা আছে, ডেটার জন্য নির্ধারণ করা নেই।
ইন্টারনেটের জন্য এরকম একটি সীমারেখা থাকা উচিত। আমি ব্যান্ডউইডথের প্যাকেজ নিতে চাই তাহলে কেন দিবেন না, এক এমপিবিএস প্যাকেজ নেব এ সুযোগটা থাকতে হবে। অনাকাঙ্খিত এসএমএস ভোগান্তি লাঘবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এ ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে বের করা উচিত। ১৪ কোটি সংযোগ ব্যবহারকারীর অধিকার অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, কারণ এটি জনগণের সরকার। যত অভিযোগ আছে আপনারা সবগুলো জানান এবং মীমাংসা করে দিতে পারি সেটাও আমি করবো।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে কোন কাজগুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হবে জানতে চাইলে নতুন মন্ত্রী বলেন, আমাকে ৫ থেকে ৭ দিন শিখতে হবে। প্রকল্পগুলো যেসব আছে সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পিকআপ করে নেব। এ সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও সচিব সুরীর কিশোর চৌধুরী নতুন মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়ে নতুন মোস্তফা জব্বার বলেন, ২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার এসেছিল তখন মনে করেছিলাম, প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেতেই পারি। তবে পরে হলেও শেখ হাসিনা আমাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন।
২০১৫ সালে টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতায় তাকে সে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, এ বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে জানালে তিনি বলেছিলেন, এর চেয়ে যদি বড় দায়িত্ব দেই। তিনি আসলে কোনো কথাই ভুলেন না। এর আগে সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন নতুন দায়িত্ব নেওয়া মন্ত্রী। এ সময় তার সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।